রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখন “স্বল্প স্থিতিশীলতা” রয়েছে — গত কয়েক বছরে বড়‐ছোট আন্দোলন, ক্ষমতার ঘুরাফেরা, দলীয় বৈরিতা চোখে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা (law & order), সংখ্যালঘুদের অধিকার, বিচারিক স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদিতে গুরুতর ভুলগুলেও ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, যদিও উন্নয়ন হচ্ছে, তবুও বৈদেশিক ঋণ, আর্থিক সেক্টরের দুর্বলতা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি ঝুঁকি হিসেবে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি এবং বন্যার মতো পরিবেশগত ঝুঁকিগুলো খুবই বাস্তব।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও মৌলিক স্বাধীনতা (যেমন সংবাদ মাধ্যম, সমাবেশের অধিকার) কঠিন চাপের মুখে রয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনীতির মধ্যে পারিবারিক ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক স্বার্থ বিজড়িত রয়েছে। বেকারত্ব, সমাজ-অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কিছু দুর্বলতা রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতির বর্তমান অবস্থা, প্রধান খাত, এবং কিছু নজির তুলে দিচ্ছি —
দেশের মধ্যে দুর্নীতি “প্রচলিত”, “দীর্ঘস্থায়ী” ও “সবদিক থেকে গুরুভার” বলে বিশ্লেষকরা জানান। জনসাধারণের মধ্যে এক জরিপ বলছে: গত এক বছরে জনগণের ~৭০.৯% মানুষ ভোগ করেছেন দুর্নীতির কারণে কোনো না কোনো সময়ে সেবা নেওয়ার সময়।
মূল দুর্নীতির খাত ও ধরন
সেবা ও প্রশাসন খাত: লাইসেন্স পাওয়া, অনুমোদন দেওয়া, জনসেবা নেওয়া এসব ক্ষেত্রে ঘুষ ও অনিয়মের খবর রয়েছে। পরিবেশ ও জলবায়ু খাত: উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু অভিযোজন ও বনপুনরুদ্ধার প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে — প্রায় “বিকল্প নিরীক্ষণহীন” প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল গায়েব হয়ে যাওয়া। বড় অবকাঠামো প্রকল্প ও অর্থায়ন: যেমন একাধিক বড় প্রকল্পে ঠিকাদারি, চুক্তি, ক্রয়-প্রক্রিয়ায় ঘুষ-দুর্নীতি-চাপ প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
কেন এই দুর্নীতি এত ভয়ঙ্কর?
দেশে ন্যায্য সেবা পৌঁছাতে পারে না, জনসাধারণ দুর্ভোগে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন মূলধারায় বাধা আসে কারণ বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধীর হয়, কারণ তহবিল সঠিক কাজে যায় না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কমে যায় — যে কারণে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়।
NCP-র বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে, যা দুর্নীতির বা অসদাচরণের প্রসঙ্গে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিচে:
পার্টির এক উচ্চপর্যায়ের নেতা Gazi Salauddin Tanvir-কে পাঠানো হয়েছে সাময়িক দায়িত্ব থেকে কারণ তাঁকে করা হয়েছে অভিযোগ—“ডেপুটি কমিশনার নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপ”, “টেক্সটবুক প্রোকিউরমেন্টে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ”। সামাজিক ও অনলাইন মাধ্যমে সমালোচনামূলক মন্তব্য রয়েছে—যেখানে বলা হচ্ছে পার্টির অর্থায়ন ও কর্মপন্থায় স্বচ্ছতা নেই। “Even after the news report, it took 40 days to suspend him … Everybody knows about their corruptions.” Transparency International Bangladesh-র পরিচালক বলেন, NCP-কে “রাজা-পক্ষীয় পার্টি” হিসেবে দেখা হচ্ছে — অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়া এবং পুরনো রাজনীতির ধরনে ফেরার আশঙ্কা আছে।
বিশ্লেষণ
একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে NCP-র উদ্দেশ্য ভালো মনে হলেও, শুরু থেকেই দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অল্প সময়েই বড় বড় অভিযোগ উঠে আসায় জনগণের বিশ্বাসে ধাক্কা পড়েছে। রাজনীতিতে নতুন বললেও পুরনো রাজনীতির প্যাটার্ন (যেমন নিয়োগ‐চাপ, কমিশন‐ব্যবস্থা, ক্রয়‐বিক্রয়ের অনিয়ম) আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। যদি NCP সত্যিই পরিবর্তনের দিক থেকে এগোতে চায়, তাহলে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়— প্রমাণযোগ্য কার্যক্রম, স্বচ্ছতা, নিয়োগ‐প্রক্রিয়া ও অর্থায়নে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
NCP-সংক্রান্ত প্রধান দুর্নীতি-অভিযোগ ও মামলা (সংক্ষিপ্ত টিকা + সোর্স)
Gazi Salauddin Tanvir (Joint Member Secretary — NCP) — স্থগিত ও অভিযোগ পার্টি জানায় তাঁকে পার্টি দায়িত্ব থেকে অস্থায়ীভাবে সরানো হয়েছে এবং শোক কজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে আছে: জেলা প্রশাসকের নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপ, টেক্সটবুক (পাঠ্যপুস্তক) প্রোকিউরমেন্টে কমিশন নেওয়া ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়া। Anti-Corruption Commission (ACC) তাকে (এবং সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিকে) সমন করেছে এবং তদন্তের পর্যন্ত বিষয়টি উঠেছে — খবর অনুযায়ী ACC-র কাছে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ACC-র তদন্ত/সমন সম্পর্কিত রিপোর্ট স্থানীয় সংবাদগুলো (Dhaka Tribune, Prothom Alo, Bd-Pratidin ইত্যাদি) জানিয়েছে ACC-র কাছে NCP-সংলগ্ন কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ / অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু সমন ও তদন্ত চলছে। (এইগুলো এখনও তদন্ত পর্যায়ে—চেয়ার্জশীট/আরোপপত্র না হলে “অভিযোগ” হিসেবে দেখা উচিত)। নকল পরিচয় / প্রতারণা সংক্রান্ত ঘটনার স্পর্শকাতর উল্লেখ ACC-এর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে এমন কয়েকজন যাঁরা নিজেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে উপস্থাপন করে প্রতারণা করছিল—সংবাদে বলা হয়েছে ওই ঘটনায় NCP-এর একটি স্থানীয় (chief organiser / south) পদের ব্যক্তির সোশ্যাল পোস্ট ACC-র নজরে এসে পড়ে — এই কেসে সরাসরি NCP-কেন্দ্রিক নেতাদের বিরুদ্ধে দণ্ডিত হয়েছেন বলে নয়, কিন্তু NCP-যুক্ত কারও সোশ্যাল মিডিয়া-রোল ঘটনাকে প্রকাশ্যে এনেছে। পার্টির ওপর সাধারণ সমালোচনা ও স্বচ্ছতার অভাব স্বাধীন/স্থাপিত রিপোর্টিং ও সিভিল সোসাইটি (Transparency/স্থানীয় বিশ্লেষকরা) বলছেন: নতুন দল হওয়া সত্ত্বেও অর্থায়ন, নিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যাচ্ছে; সেই কারণেই দ্রুতই অভিযোগ-সমূহ উঠে এসেছে। (এইক্ষেত্রে ‘অভিযোগ’ vs ‘প্রমাণিত মামলা’ আলাদা রাখতে হবে)।
জনগণের প্রত্যাশা NCP-র ওপর ছিল বেশি, কিন্তু সেটি টিকিয়ে রাখতে হলে দলকে পুরনো রাজনীতির দোষ থেকে মুক্ত প্রমাণ দিতে হবে—বিশেষ করে অর্থায়ন, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, এবং আইনি দায়বদ্ধতায়।
সংগঠন ও ব্যাপক অংশগ্রহণের অভাব বিশ্লেষকরা বলছেন, NCP-র এখনো গ্রামীণ অঞ্চলে বা জাতীয়ভাবে শক্ত ভোটব্যাংক নেই। রাজনীতিতে শুধুই অভিজ্ঞ তরুণ বা শহুরে অংশই যথেষ্ট নয় — রাজনৈতিক যন্ত্রণা, স্থানীয় নেতারা, দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন লাগে। এই দিকটি NCP-র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অভিজ্ঞতার অভাব ও বাস্তবায়নের ঘাটতি প্রতিশ্রুতি অনেক দেওয়া হয়েছে — নতুন সংবিধান, অংশগ্রহণমূলক দেশ, সংস্কার ইত্যাদি। কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি। “Action that appears to be missing so far” – এমন মন্তব্যও রয়েছে। সংস্কার একটি কঠিন প্রক্রিয়া — শুধু কথা দিয়েই নয়, সময়, সংগঠন ও রাজনৈতিক সহায়ক পরিবেশ দরকার। ভোটব্যাংক বা পুরনো দলের ভ্রাতৃপ্রতিযোগিতা পুরনো দলগুলো যেমন Awami League বা Bangladesh Nationalist Party তাদের নিজস্ব শক্তিশালী ভোটব্যাংক ও দীর্ঘকালীন সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। NCP-র কাছে এই ধরনের রূপ নিচ্ছিলেই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকরা বলছেন, “Without alliances, its impact is likely to be marginal.” দুর্নীতি‐অভিযোগ ও আস্থা কমে যাওয়ার ঝুঁকি যেভাবে শুরুতে “সংস্কারপন্থী” ইমেজ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেল তা NCP-র ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। যেমন একটি সংবাদে বলা হয়েছে “in infighting, accusations of corruption … turn idealism into opportunism”। এজন্য এ-দলে বিশেষভাবে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি দ্রুত স্থাপন করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক পরিবেশ ও ইন্সটিটিউশনাল বাধা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনই খুব স্থিতিশীল নয় — নির্বাচন, প্রতিষ্ঠান-সংস্কার, রাজনৈতিক দ্বিধা আছে। একটি নতুন দল হিসেবে NCP-র জন্য এই পরিবেশে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে।
সমীক্ষা: NCP টিকে থাকবে কি না, বা আসল সংস্কার আনতে পারবে কি না?
টিকে থাকার সম্ভাবনা: হ্যাঁ — যদি তারা সময়মতো সংগঠন গড়তে পারে, ভোটব্যাংক তৈরি করতে পারে, এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো সারাতে পারে তাহলে নতুন দল হিসেবে তারা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। আসল সংস্কার আনতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা: এখানে আশঙ্কা বেশি — কারণ সংস্কার মানে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ষাঁড়শক্তি, ঘুলোপ্রথা, সংস্থাগত সংস্কৃতি এসবকে চ্যালেঞ্জ করবে। তাই যদি NCP-র নেতারা সত্যিই আগ্রহী হন, তাহলে তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হবে: অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করা ও প্রকাশ করা। স্থানীয় সংগঠন ও দলীয় কাঠামো দ্রুত গঠন করা। দুর্নীতি, নিয়োগ-চাপ, অর্থায়ন-স্বচ্ছতা ইত্যাদিতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। রাজনৈতিক সহায়ক পরিবেশ ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া হাতে নেওয়া।
শেষ কথা যা না বললে নয়, আসুন আমরা সবাই মিলে, হাতে হাত রেখে দেশের জন্য কাজ করি।আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি,
Emam Hossain
এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান