সময়কাল: ২৬ মার্চ – ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
অবস্থান: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
ফলাফল:বাংলাদেশের স্বাধীনতা
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব বাংলা হয় পূর্ব পাকিস্তান, আর পশ্চিম অংশ হয় পশ্চিম পাকিস্তান। দুই অংশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সব দিকেই ছিল বিশাল বৈষম্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীনতার বীজ রোপণের শুরু। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট চালায়—যা ছিল গণহত্যার সূচনা।
মুক্তিযুদ্ধ
২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তী নয় মাস মুক্তিবাহিনী (বাংলার সাধারণ মানুষ, ছাত্র, কৃষক, সৈনিক সবাই) পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। ভারত সরকার ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে যোগ দেয়, ফলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৌশল
(১)গেরিলা যুদ্ধ (Guerrilla Warfare)
মুক্তিবাহিনীর মূল কৌশল ছিল গেরিলা আক্রমণ — হঠাৎ আক্রমণ করে দ্রুত সরে যাওয়া। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সেতু, রেললাইন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ও শত্রুপক্ষের ঘাঁটি আক্রমণ করত। শহরের ভিতরেও গোপনে কাজ করত “বীর উত্তম গেরিলা দল”, যেমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জে।
(২)সীমান্ত ঘাঁটি স্থাপন
মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনিং ক্যাম্প ও ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। ভারতীয় সেনা ও বিএসএফ (Border Security Force) তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা দেয়। সেখান থেকেই তারা দেশভাগ করে বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ চালাত।
(৩ “মুক্তাঞ্চল” গঠন
যেসব জায়গা পাকিস্তানি সেনারা দখল হারাত, মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে “মুক্তাঞ্চল” (Free Zone) ঘোষণা করত — যেমন: মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর), যেখানে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়।
(৪)মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Warfare)
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারণা চালাত, মনোবল জোগাতো, এবং পাকিস্তানি প্রচারণার জবাব দিত। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।
(৫) সম্মিলিত আক্রমণ (Joint Operation)
নভেম্বরের পর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনী একত্রে সম্মিলিত আক্রমণ (Joint Command) গঠন করে। এর ফলে দ্রুত জয় আসে, এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তান সেনারা ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে।
যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ
উত্তর দিক থেকে (রংপুর, দিনাজপুর) → দক্ষিণে ঢাকার দিকে অগ্রসর। পূর্ব দিক থেকে (সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম) → চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা লক্ষ্য। পশ্চিম দিক থেকে (যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা) → ঢাকায় প্রবেশের রুট। দক্ষিণে নৌবাহিনী নদীপথে কৌশলগত আক্রমণ চালায়।
ফলাফল
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী নির্যাতিত, এবং কোটি মানুষ শরণার্থী হয়। এটি বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বীরত্বপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃত।
এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান