দুর্নীতি শুধু অপকর্মের বিষয় নয় — অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সেবা-প্রদান, প্রশাসনিক সেক্টর ও প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে প্রচলিত সমস্যা হয়ে গেছে। ঘুষ-প্রথা সাধারণত “সেবা না পেলে চলবে না” এই ধারণার উপর ভিত্তি করে কাজ করছে — যেমন “সেবা গ্রহণের জন্য ঘুষ দিতে হয়”-র মত অনুভূতি।  দুর্নীতির কারণে শুধু সামাজিক অবিচার নয়, অর্থনৈতিক খাতেও বড় ক্ষতি হচ্ছে — যেমন প্রকল্প বাস্তবায়ন সফল হচ্ছে না, তহবিল সঠিকভাবে যাচ্ছে না, বাইরের বিনিয়োগকারীর বিশ্বাস হ্রাস পাচ্ছে।

দুর্নীতি ও অর্থপাচার-মুদ্রলুপ্তি (money‐laundering) এক-অপরকে জড়িয়ে গেছে। যেমন TI-র চেয়ারম্যান বলেছেন, বাংলাদেশে, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি ডলারের “অপ্রকাশিত মুদ্রা পাচার” হয়েছে।  

শুধুই প্রশাসনিক দুর্নীতি নয়, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে — রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে। নিরাপত্তা বাহিনীর স্বাধীনতা, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, রাজনৈতিক দল ও প্রেসএর স্বাধীনতা — এসব অবস্থান দুর্বল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠি (উদাহরণ­স্বরূপ: সংখ্যালঘু, নারী, শিশু, আদিবাসী) অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়ানো, দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রকল্প তত্ত্বাবধান ও দেখভালের ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে — দুর্নীতির “হালকা” রূপ যেমন ঘুষ-দেনা থেকে শুরু করে বড় প্রকল্পভিত্তিক দুর্নীতিতে গিয়ে শেষ হয়। নাগরিকদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে — সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয় এমন ব্যবস্থায় সামাজিক বিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অর্থপাচার ও লোভনীয় আর্নিংস বিদেশে পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ: দুর্নীতির তথ্য অভিযোজিতভাবে সংগ্রহ ও প্রকাশ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে, যাতে বাস্তব চিত্র সামনে আসে।

Human Rights Watch (HRW)-এর ২০২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: গত ১৫ বছর ধরে নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো “বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, স্বেচ্ছামূলক গ্রেফতার, নির্যাতন” ইত্যাদি কাজে প্রক্রিয়াগত অংশ নিচ্ছে।  Human Rights Support Society (HRSS)-র কোয়ার্টারলি রিপোর্ট অনুযায়ী — ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নারী-শিশু নির্যাতন এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।  

সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন এসব বিষয়ে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর তদারকি ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে — যাতে পার্টি-নৈতিক প্রভাব কম হয় ও মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত হয়। সাংবাদিকদের ও মতপ্রকাশ-কারীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে। তথ্য ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা বাড়াতে হবে — যাতে মানুষ জানে তাদের অধিকার কী এবং কোথায় অভিযোগ করবেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মনিটরিং ও পরামর্শ কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।

Anti‑Corruption Commission (Bangladesh) (ACC)-র দ্বারা চালানো একটি মামলা অনুযায়ী, একটি বড় গ্রুপের (S Alam Group) বিরুদ্ধে প্রায় ১০,৪৭৯.৬ কোটি টাকা (বাংলাদেশি টাকায়) ঋণপাচার, সম্পদ লোপভূপি এবং মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।  এর আগে এই গ্রুপের সঙ্গে একটি ব্যাংক (Islami Bank Bangladesh)-এর ঋণগ্রহণ ও নীতিমালার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে — ঋণ সীমা অতিক্রম, ব্যাংক নিয়ম ভঙ্গ ও ঋণ পুনর্নবীকরণ।  এছাড়া, সৃষ্ট পরিস্থিতি এমন যে, পরিবেশীয় তহবিল ও উপকূলীয় প্রকল্পগুলো-তেও দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে — যেমন রাজনীতি ও প্রশাসনিক প্রভাববাহী ব্যক্তিদের কারণে প্রকল্প অনুমোদন টেকনিক্যাল ও পরিবেশগত যাচাইবিহীন হয়ে পড়েছে। 

এই ধরনের দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয় — সাধারণ জনগণের ওপর এর প্রভাব হয় খুব বড়: যেমন প্রকল্প ঠিকমতো কাজ না করা, পর্দার আড়ালে অর্থ সরে যাওয়া, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ব্যাংকিং সিস্টেম ও বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে — বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস কমে যেতে পারে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য পাওয়া বাস্তব সহায়তা কমে যেতে পারে,

পরিশেষে..,,

আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে সাথে আঁকে ওপরের ওপর সোহন -শীল হতে হবে!!!!

Posted in

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান