• ১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গ (East Bengal)–এ গঠিত যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী জোটের সময় তারা বহুল পরিচিত ‘লাঙ্গল’ প্রতীক পেতে না পেরে বিকল্প হিসেবে নৌকা নির্বাচন করে; পরে ওই প্রতীকটি যুক্তফ্রন্ট ভগ্ন হওয়ার পরেও পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধরে রাখে।  পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত জয় পায় — ফলে প্রতীকটির ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যায়।

    নির্বাচনী প্রতীক মূলত সেই কারণেই আছে যাতে ভোটার — বিশেষত গ্রামের, যেখানে নিরক্ষরতার হার বেশি থাকে — দ্রুত চিনতে পারে কোন প্রার্থী/দল কারা প্রতিনিধিত্ব করছে। এ কারণে প্রতীকগুলো ভোটপ্রচারে ও ভোটকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিচায়ক। 

    ভূগোলগত ও সাংস্কৃতিক মিল: বাংলাদেশ নদীপ্রধান দেশ; নৌকা গ্রামীণ জীবনের স্বচ্ছ ও ঘনিষ্ঠ চিত্র। নৌকা—কৃষক-জেলে-নদী সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের জীবনচর্চার সঙ্গে সহজে মিশে যায়।  জাতীয়-মৌলিক কনটেক্সট: আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ও বাংলা জাতীয়তাবাদের সাথে জড়িত ইতিহাস নৌকাকে দলীয় পরিচয়ের পাশাপাশি আবেগগত চিহ্ন হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।

    একাধিক দলের ব্যবহার ও জোট: বড় জোট বা ছোট সহযোগী দলগুলো মাঝে মাঝে নিজেদের স্বাধীন প্রতীক না রেখে নৌকা নিয়ে অংশ নিতে চায় — এতে নৌকার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা বাড়ে।  কমিউনিকেশন ও লয়্যালটি: নির্বাচনী প্রচারণায় “নৌকা” কথা বা স্লোগান (উদাহরণ: “নৌকা ছাড়া…” ধরনের উক্তি) ব্যবহার করে সমর্থকদের একক Loyal/ব্রান্ড-অ্যাসোসিয়েশনের ধারণা জোরদার করা হয় — অনেক সময় সেটি মজার ছলে বলা হলেও কখনও কখনও সেটি তীব্র দলীয় আনুগত্যও বোঝায়।  

    প্রতীক যখন একে–অপরের সঙ্গে এতগুলো ইতিহাস, স্মৃতি, এবং আবেগ জড়িয়ে নেয়, তখন সেটি কেবল লোগো নয়— এটা ভোটার-সনাক্তকরণ, দলীয় হালচাল, এবং মাঝে মাঝে মানুষের রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি অংশে পরিণত হয়। ফলে “নৌকা ছাড়া কিসের ভোট” ধরনের উক্তি শুধু রাজনৈতিক স্টেটমেন্ট নয়— তা সামাজিক ইতিবাচক/নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে।  

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে “নৌকা” হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক।নৌকা ছাড়া কিসের ভোট” 

  • গ্রামে বাজে ঢোল-তাশা,

    বলে সবাই — “সময় আসা!”

    ব্যানার টাঙে, পোস্টার ওঠে,

    সবাই চায় ভোটের খাতে।

    কেউ বলে — “আমরাই আসল দেশপ্রেমিক!”

    কেউ বলে — “ওরা তো স্রেফ অভিনয়বাজিক।”

    তবু মাঠে নামলে একটাই সুর,

    “নৌকা ছাড়া ভোট মানে কিসের দূর?”

    বৃদ্ধ দাদার মুখে হাসি,

    বলতে থাকে পুরনো খাসি,

    “এই নৌকায় চড়েই পেরেছি কাল,

    আজও ভাসে সেই আশার পাল।”

    তরুণ বলে — “কাজ কোথায়? দাম কই?”

    বৃদ্ধ বলে — “ধৈর্য ধরো ভাই!”

    বৃষ্টি এলে নদী ফুলে,

    ভোটের দিনে হাসি দুলে।

    নৌকা যায়, ঢেউ বাজে,

    সবাই ভাবে — এটাই সাজে।

    কারণ দেশে সেই পুরনো সুর —

    নৌকা ছাড়া কিসের ভোট, হে পুর?

    তরুণ বলে — “চাকরি কই?”

    নেতা হাসে — “আসছে ভাই!”

    বলে আবার, “দেশটা বড় হোট,

    নৌকা ছাড়া কিসের ভোট!”

    তবু বছর ঘুরে, আসে সেই দিন,

    ব্যানার ওঠে, বাজে বীন,

    সবাই আবার মুখে রট—

    “নৌকা ছাড়া কিসের ভোট!”

  • বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই বড় দল —

    আওয়ামী লীগ (AL) বিএনপি (BNP)

    এই দুই দলের মধ্যে বিরোধের কারণে একাধিকবার একতরফা নির্বাচন হয়েছে।

    ২০১৪ সালের নির্বাচন: বিএনপি ও তাদের জোট অংশ নেয়নি, কারণ তারা চেয়েছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। ফলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, এবং অনেক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই ছিল না। ২০২৪ সালের নির্বাচন: বিএনপি ও কিছু দল আবারও নির্বাচন বর্জন করে; আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো অংশ নেয়।

    প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে কোনো বড় দল ছাড়া নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু সেটি গণতান্ত্রিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে যদি সব দল অংশ না নেয়।

    অনেক বিশ্লেষক বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন (inclusive election) ছাড়া জনগণের সত্যিকারের মতামত প্রতিফলিত হয় না।

    আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে” — এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি বিষয়।

    যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে —

    বাংলাদেশের সবচেয়ে সংগঠিত ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল অনুপস্থিত থাকবে। ফলে সংসদে একতরফা বা দুর্বল বিরোধী দল-নির্ভর সরকার গঠিত হতে পারে। এতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা (যারা দেশের একটি বড় অংশ) নির্বাচনের ফলাফল মেনে নাও নিতে পারে।

    অশান্তি, আন্দোলন, সহিংসতা, প্রশাসনিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে।

    আন্তর্জাতিকভাবে ও দেশের অভ্যন্তরে এই ধরনের নির্বাচনকে “অংশগ্রহণহীন” বা “একতরফা” নির্বাচন হিসেবে দেখা হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ সাধারণত অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে সেই বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

    সরকার গঠিত হলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক চাপ বেড়ে যাবে।

    সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারলেও, জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণ না থাকলে সাংবিধানিক বৈধতা তর্কসাপেক্ষ হয়ে উঠবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর (বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন) নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

    রাজনৈতিক অস্থিরতা সরাসরি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে:

    বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারে। টাকায় চাপ, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, এবং বাণিজ্যে ক্ষতি হতে পারে।

    ফলাফল: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

    বাংলাদেশের রাজনীতি আগে থেকেই মেরুকৃত (polarized)। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে এই বিভাজন আরও গভীর হবে — মানুষ রাজনৈতিকভাবে “পক্ষ–বিপক্ষ” এ বিভক্ত হয়ে পড়বে।

    ফলাফল: সামাজিক সংহতি দুর্বল হবে, পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়বে।

    বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিকবার এমন নির্বাচন হয়েছে — দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। 

    ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন

    তৎকালীন সরকার ছিল বিএনপি (খালেদা জিয়া) নেতৃত্বাধীন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করে।

    ফলাফল:

    প্রায় একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ৩০০টির মধ্যে ২৭৮টি আসন পায়, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ ছিল না প্রায়। ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম (২০–২৫% অনুমান করা হয়)।

    পরিণতি:

    দেশে প্রবল আন্দোলন, সহিংসতা ও হরতাল শুরু হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে সরকার সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। পরবর্তী ১২ জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

    শিক্ষা: একতরফা নির্বাচন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না; রাজনৈতিক সংকট আরও বাড়ায়।

    ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন

    তৎকালীন সরকার ছিল আওয়ামী লীগ (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বাধীন। বিএনপি, জামায়াত, ও বেশিরভাগ বড় দল নির্বাচন বর্জন করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে।

    ফলাফল:

    ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। ভোটার উপস্থিতি ছিল আনুমানিক ৩৯–৪০%। হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

    পরিণতি:

    আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত নির্বাচন (জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করে)। আওয়ামী লীগ সরকার টিকে যায়, কিন্তু রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বিএনপি ও বিরোধীদলগুলো ২০১৫ সালে বড় আন্দোলন করে, যা দমন করা হয়।

    শিক্ষা: একতরফা নির্বাচন সরকারকে ক্ষমতায় রাখলেও রাজনৈতিক বিভাজন গভীর করে।

    ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন

    বিএনপি ও কয়েকটি বড় দল নির্বাচন বর্জন করে; দাবি ছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আওয়ামী লীগ অংশ নেয় এবং তাদের কিছু ছোট মিত্র দলও নির্বাচন করে।

    ফলাফল:

    আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী, বাকিগুলো ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ হয়। ভোটার উপস্থিতি সরকারিভাবে প্রায় ৪০%, তবে বাস্তবে আরও কম বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

    পরিণতি:

    আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচনটি অংশগ্রহণহীন ও প্রতিযোগিতাহীন হিসেবে বিবেচিত হয়। বিএনপি রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখে, কিন্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণ শক্ত থাকে।

    শিক্ষা: অংশগ্রহণহীন নির্বাচন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনে না, বরং গণতন্ত্রের গুণগত মান কমায়।

    ১৯৯৬, ২০১৪, ও ২০২৪ — এই তিনটি নির্বাচন মিলিয়ে দেখলে একটা স্পষ্ট প্যাটার্ন বা শিক্ষা পাওয়া যায় 🤯😔

    বাংলাদেশে “একপক্ষীয়” গণতন্ত্র টেকসই নয়। যখনই এক বড় দল নির্বাচন থেকে দূরে থাকে, নির্বাচন তার অর্থপূর্ণতা হারায় — ভোটার অংশগ্রহণ কমে, জনআস্থা নষ্ট হয়। জনগণের আস্থা হারানো মানেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। নির্বাচনের পরে বিরোধিতা, সহিংসতা, ও আস্থাহীনতার চক্র নতুন করে শুরু হয়। গণতন্ত্র মানে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা ছাড়া “নির্বাচন” হয়তো আইনগতভাবে সঠিক, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে “গণতান্ত্রিক” হয় না।

    আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ”?

  • “আপনারা যারা ভুলে গেছেন, তাদের বলতে চাই — শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ যে প্রতিদান দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতি, তা শুধু উন্নয়ন বা অগ্রগতি নয়, এটি এক অভয়ের প্রতীক। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মুখে এই নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ মাথা নত করে না, মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। যত বাধাই আসুক, যত ষড়যন্ত্রই হোক, এই দেশ এগিয়ে যাবে নিজের শক্তিতে, নিজের মানুষের বিশ্বাসে। কারণ শেখ হাসিনা মানে সাহস, মানে অগ্রগতি, মানে অভয় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।”

    অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি (গড়ে ৬%–এর বেশি)। অবকাঠামো উন্নয়ন: পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল ইত্যাদি। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষায় অগ্রগতি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।

    শিক্ষায় নারীর অগ্রগতি

    প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের ভর্তি হার এখন ছেলেদের সমান বা তার থেকেও বেশি। উদাহরণ: ২০২3 সালের হিসাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ প্রায় ৯৮%। “উদ্দীপনা” ও “স্টাইপেন্ড” কর্মসূচি — গ্রামীণ এলাকায় মেয়েদের স্কুলে রাখার জন্য সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রকল্প (FSSP) — এই কর্মসূচির মাধ্যমে হাজার হাজার মেয়েকে স্কুলে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। নারী শিক্ষক বৃদ্ধি — প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৬০%–এর কাছাকাছি, যা মেয়েদের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করেছে।

    গার্মেন্টস শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ৮০% নারী — যা নারীর কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বাধীনতা এনেছে। মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম (গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ইত্যাদি) — নিম্নবিত্ত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন তহবিল (Women Entrepreneur Fund) — ব্যাংক ও সরকারি সহায়তায় নারীরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা শুরু করতে পারছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি নারীদের আইটি-খাতে কাজের সুযোগ তৈরি করেছে।

    সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি, তার বাইরে সরাসরি নির্বাচিত নারীর সংখ্যাও বাড়ছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা) নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। শেখ হাসিনা নিজেই নারী নেতৃত্বের শক্ত প্রতীক — দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘতম মেয়াদে নারী প্রধানমন্ত্রী।

    নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০০) প্রণয়ন ও সংশোধন। ঘরোয়া সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন (২০১৭) — মেয়েদের ন্যূনতম বিবাহের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি (২০১১) — নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি নীতিগত কাঠামো।

    যদিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবুও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে:

    বাল্যবিবাহ এখনো কিছু এলাকায় প্রচলিত। কর্মক্ষেত্রে নারী নিরাপত্তা ও সমান মজুরি নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ। গ্রামীণ এলাকায় উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের ঝরে পড়া এখনো একটি বড় সমস্যা।

    বাংলাদেশে নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন আজ একটি সাফল্যের গল্প, তবে চ্যালেঞ্জও এখনো বিদ্যমান।

    সরকার, এনজিও ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই অগ্রগতিকে টেকসই করতে পারবে।

  • বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তপ্ত অবস্থা পার করছে। নির্বাচন, গণতন্ত্রের অবস্থা, বিরোধী দলের আন্দোলন, আর সরকারের ভূমিকা — এসব বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন স্থিতিশীলতা আছে, আবার অনেকে মনে করছেন রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত হচ্ছে।

    অর্থনীতিতে কিছু মিশ্র সংকেত দেখা যাচ্ছে —

    রপ্তানি (বিশেষ করে পোশাক শিল্প) এখনো দেশের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে, ডলার সংকট আছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনযাপন কঠিন হচ্ছে। সরকারের বড় প্রকল্পগুলো (যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল) উন্নয়ন দেখাচ্ছে, কিন্তু ঋণের চাপও বাড়ছে।

    বেকারত্ব, দুর্নীতি, এবং সামাজিক বৈষম্য এখনো বড় সমস্যা।

    তরুণ প্রজন্ম অনলাইনে সক্রিয়, তারা পরিবর্তন ও স্বচ্ছতার দাবি তুলছে।

    আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই অনেক মানুষ এখনো দলটিকে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী দল হিসেবে দেখে। “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান”-এর প্রতি শ্রদ্ধা থেকে অনেকের মধ্যে দলটির প্রতি একধরনের আবেগী আনুগত্য আছে। বিশেষ করে বয়স্ক প্রজন্মের মধ্যে এই আবেগ এখনো প্রবল।

    সরকার গত এক দশকে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু, যোগাযোগ, মেট্রোরেল ইত্যাদিতে বড় কাজ করেছে। অনেকেই মনে করেন, “যে দল কাজ করতে পারে, তাকে ক্ষমতায় রাখাই ভালো।” অনেক সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতা বা অস্থিরতা চায় না — তারা “স্থিতিশীলতা”কে উন্নয়নের শর্ত মনে করে।

    আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করেছে — ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যন্ত তাদের লোকবল আছে। স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, কৃষি সহায়তা — এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অনেকে মনে করেন, “সরকারের সঙ্গে থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়।”

    অনেকেই মনে করেন, “আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই” — অর্থাৎ “যাকে ভোট দেবো, সে-ই বা কে?” এই অবস্থায় অনেকেই আপাতত “কম ক্ষতি” মনে করে বর্তমান সরকারকেই সমর্থন দেয়।

    কেউ কেউ খোলাখুলি বিরোধিতা করতে ভয় পায় — প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক চাপের আশঙ্কা থাকে।

    আওয়ামী লীগকে এখনো অনেকেই চায় —

    কেউ আবেগের কারণে, কেউ উন্নয়নের জন্য, কেউ স্থিতিশীলতার জন্য,

    Emam Hossain

  • ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সংঘটিত একটি মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে পালন করা হয় — সেদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার চার জাতীয় নেতা স্যার সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী—কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশে অস্থিরতা দেখা দেয়। ৩ নভেম্বর কারাগারে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের এই চার নেতা—যারা মুজিবনগর সরকারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

    এই চারজনই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুজিবনগর সরকারের মূল স্তম্ভ। তারা জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যে অবদান রেখেছিলেন, তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয়

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যখন অরাজকতায় নিমজ্জিত, তখন দেশবিরোধী শক্তি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর রাতে কারাগারের ভেতর ঢুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এই চার মহান নেতাকে। এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার এক সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা।

    এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে শহীদ চার নেতাকে। তাঁদের দেশপ্রেম, নৈতিকতা, সততা ও আত্মত্যাগ আমাদের জন্য চিরন্তন প্রেরণা।

    এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। জাতি এই দিনে শহীদ চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং দেশপ্রেম, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আদর্শে তাঁদের অবদানের স্মরণ করে।

    Emam Hossain

  • সময়কাল: ২৬ মার্চ – ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

    অবস্থান: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)

    ফলাফল:বাংলাদেশের স্বাধীনতা

    মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি

    ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব বাংলা হয় পূর্ব পাকিস্তান, আর পশ্চিম অংশ হয় পশ্চিম পাকিস্তান। দুই অংশের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সব দিকেই ছিল বিশাল বৈষম্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীনতার বীজ রোপণের শুরু। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট চালায়—যা ছিল গণহত্যার সূচনা।

    মুক্তিযুদ্ধ

    ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তী নয় মাস মুক্তিবাহিনী (বাংলার সাধারণ মানুষ, ছাত্র, কৃষক, সৈনিক সবাই) পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। ভারত সরকার ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে যোগ দেয়, ফলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে।

    মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৌশল

    (১)গেরিলা যুদ্ধ (Guerrilla Warfare)

    মুক্তিবাহিনীর মূল কৌশল ছিল গেরিলা আক্রমণ — হঠাৎ আক্রমণ করে দ্রুত সরে যাওয়া। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সেতু, রেললাইন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ও শত্রুপক্ষের ঘাঁটি আক্রমণ করত। শহরের ভিতরেও গোপনে কাজ করত “বীর উত্তম গেরিলা দল”, যেমন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জে।

    (২)সীমান্ত ঘাঁটি স্থাপন

    মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সীমান্ত এলাকায় ট্রেনিং ক্যাম্প ও ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। ভারতীয় সেনা ও বিএসএফ (Border Security Force) তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা দেয়। সেখান থেকেই তারা দেশভাগ করে বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ চালাত।

    (৩ “মুক্তাঞ্চল” গঠন

    যেসব জায়গা পাকিস্তানি সেনারা দখল হারাত, মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে “মুক্তাঞ্চল” (Free Zone) ঘোষণা করত — যেমন: মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর), যেখানে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়।

    (৪)মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Warfare)

    স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারণা চালাত, মনোবল জোগাতো, এবং পাকিস্তানি প্রচারণার জবাব দিত। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।

    (৫) সম্মিলিত আক্রমণ (Joint Operation)

    নভেম্বরের পর ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনী একত্রে সম্মিলিত আক্রমণ (Joint Command) গঠন করে। এর ফলে দ্রুত জয় আসে, এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তান সেনারা ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে।

    যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশ

    উত্তর দিক থেকে (রংপুর, দিনাজপুর) → দক্ষিণে ঢাকার দিকে অগ্রসর। পূর্ব দিক থেকে (সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম) → চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকা লক্ষ্য। পশ্চিম দিক থেকে (যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা) → ঢাকায় প্রবেশের রুট। দক্ষিণে নৌবাহিনী নদীপথে কৌশলগত আক্রমণ চালায়।

    ফলাফল

    বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী নির্যাতিত, এবং কোটি মানুষ শরণার্থী হয়। এটি বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম বীরত্বপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃত।

  • রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখন “স্বল্প স্থিতিশীলতা” রয়েছে — গত কয়েক বছরে বড়‐ছোট আন্দোলন, ক্ষমতার ঘুরাফেরা, দলীয় বৈরিতা চোখে পড়ছে।  আইনশৃঙ্খলা (law & order), সংখ্যালঘুদের অধিকার, বিচারিক স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদিতে গুরুতর ভুলগুলেও ইঙ্গিত রয়েছে।  অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, যদিও উন্নয়ন হচ্ছে, তবুও বৈদেশিক ঋণ, আর্থিক সেক্টরের দুর্বলতা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি ঝুঁকি হিসেবে আছে।  জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি এবং বন্যার মতো পরিবেশগত ঝুঁকিগুলো খুবই বাস্তব।  

    গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও মৌলিক স্বাধীনতা (যেমন সংবাদ মাধ্যম, সমাবেশের অধিকার) কঠিন চাপের মুখে রয়েছে।  দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনীতির মধ্যে পারিবারিক ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক স্বার্থ বিজড়িত রয়েছে।  বেকারত্ব, সমাজ-অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কিছু দুর্বলতা রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে।  

    বাংলাদেশের দুর্নীতির বর্তমান অবস্থা, প্রধান খাত, এবং কিছু নজির তুলে দিচ্ছি —

    দেশের মধ্যে দুর্নীতি “প্রচলিত”, “দীর্ঘস্থায়ী” ও “সবদিক থেকে গুরুভার” বলে বিশ্লেষকরা জানান।  জনসাধারণের মধ্যে এক জরিপ বলছে: গত এক বছরে জনগণের ~৭০.৯% মানুষ ভোগ করেছেন দুর্নীতির কারণে কোনো না কোনো সময়ে সেবা নেওয়ার সময়। 

    মূল দুর্নীতির খাত ও ধরন

    সেবা ও প্রশাসন খাত: লাইসেন্স পাওয়া, অনুমোদন দেওয়া, জনসেবা নেওয়া এসব ক্ষেত্রে ঘুষ ও অনিয়মের খবর রয়েছে।  পরিবেশ ও জলবায়ু খাত: উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু অভিযোজন ও বনপুনরুদ্ধার প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে — প্রায় “বিকল্প নিরীক্ষণহীন” প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল গায়েব হয়ে যাওয়া।  বড় অবকাঠামো প্রকল্প ও অর্থায়ন: যেমন একাধিক বড় প্রকল্পে ঠিকাদারি, চুক্তি, ক্রয়-প্রক্রিয়ায় ঘুষ-দুর্নীতি-চাপ প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।  

    কেন এই দুর্নীতি এত ভয়ঙ্কর?

    দেশে ন্যায্য সেবা পৌঁছাতে পারে না, জনসাধারণ দুর্ভোগে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন মূলধারায় বাধা আসে কারণ বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধীর হয়, কারণ তহবিল সঠিক কাজে যায় না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কমে যায় — যে কারণে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়।

    NCP-র বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে, যা দুর্নীতির বা অসদাচরণের প্রসঙ্গে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিচে:

    পার্টির এক উচ্চপর্যায়ের নেতা Gazi Salauddin Tanvir-কে পাঠানো হয়েছে সাময়িক দায়িত্ব থেকে কারণ তাঁকে করা হয়েছে অভিযোগ—“ডেপুটি কমিশনার নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপ”, “টেক্সটবুক প্রোকিউরমেন্টে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ”।  সামাজিক ও অনলাইন মাধ্যমে সমালোচনামূলক মন্তব্য রয়েছে—যেখানে বলা হচ্ছে পার্টির অর্থায়ন ও কর্মপন্থায় স্বচ্ছতা নেই।  “Even after the news report, it took 40 days to suspend him … Everybody knows about their corruptions.”  Transparency International Bangladesh-র পরিচালক বলেন, NCP-কে “রাজা-পক্ষীয় পার্টি” হিসেবে দেখা হচ্ছে — অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়া এবং পুরনো রাজনীতির ধরনে ফেরার আশঙ্কা আছে। 

    বিশ্লেষণ

    একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে NCP-র উদ্দেশ্য ভালো মনে হলেও, শুরু থেকেই দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অল্প সময়েই বড় বড় অভিযোগ উঠে আসায় জনগণের বিশ্বাসে ধাক্কা পড়েছে। রাজনীতিতে নতুন বললেও পুরনো রাজনীতির প্যাটার্ন (যেমন নিয়োগ‐চাপ, কমিশন‐ব্যবস্থা, ক্রয়‐বিক্রয়ের অনিয়ম) আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। যদি NCP সত্যিই পরিবর্তনের দিক থেকে এগোতে চায়, তাহলে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়— প্রমাণযোগ্য কার্যক্রম, স্বচ্ছতা, নিয়োগ‐প্রক্রিয়া ও অর্থায়নে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

    NCP-সংক্রান্ত প্রধান দুর্নীতি-অভিযোগ ও মামলা (সংক্ষিপ্ত টিকা + সোর্স)

    Gazi Salauddin Tanvir (Joint Member Secretary — NCP) — স্থগিত ও অভিযোগ পার্টি জানায় তাঁকে পার্টি দায়িত্ব থেকে অস্থায়ীভাবে সরানো হয়েছে এবং শোক কজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে আছে: জেলা প্রশাসকের নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপ, টেক্সটবুক (পাঠ্যপুস্তক) প্রোকিউরমেন্টে কমিশন নেওয়া ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়া।  Anti-Corruption Commission (ACC) তাকে (এবং সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিকে) সমন করেছে এবং তদন্তের পর্যন্ত বিষয়টি উঠেছে — খবর অনুযায়ী ACC-র কাছে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।  ACC-র তদন্ত/সমন সম্পর্কিত রিপোর্ট স্থানীয় সংবাদগুলো (Dhaka Tribune, Prothom Alo, Bd-Pratidin ইত্যাদি) জানিয়েছে ACC-র কাছে NCP-সংলগ্ন কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ / অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে কিছু সমন ও তদন্ত চলছে। (এইগুলো এখনও তদন্ত পর্যায়ে—চেয়ার্জশীট/আরোপপত্র না হলে “অভিযোগ” হিসেবে দেখা উচিত)।  নকল পরিচয় / প্রতারণা সংক্রান্ত ঘটনার স্পর্শকাতর উল্লেখ ACC-এর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে এমন কয়েকজন যাঁরা নিজেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে উপস্থাপন করে প্রতারণা করছিল—সংবাদে বলা হয়েছে ওই ঘটনায় NCP-এর একটি স্থানীয় (chief organiser / south) পদের ব্যক্তির সোশ্যাল পোস্ট ACC-র নজরে এসে পড়ে — এই কেসে সরাসরি NCP-কেন্দ্রিক নেতাদের বিরুদ্ধে দণ্ডিত হয়েছেন বলে নয়, কিন্তু NCP-যুক্ত কারও সোশ্যাল মিডিয়া-রোল ঘটনাকে প্রকাশ্যে এনেছে।  পার্টির ওপর সাধারণ সমালোচনা ও স্বচ্ছতার অভাব স্বাধীন/স্থাপিত রিপোর্টিং ও সিভিল সোসাইটি (Transparency/স্থানীয় বিশ্লেষকরা) বলছেন: নতুন দল হওয়া সত্ত্বেও অর্থায়ন, নিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যাচ্ছে; সেই কারণেই দ্রুতই অভিযোগ-সমূহ উঠে এসেছে। (এইক্ষেত্রে ‘অভিযোগ’ vs ‘প্রমাণিত মামলা’ আলাদা রাখতে হবে)। 

    জনগণের প্রত্যাশা NCP-র ওপর ছিল বেশি, কিন্তু সেটি টিকিয়ে রাখতে হলে দলকে পুরনো রাজনীতির দোষ থেকে মুক্ত প্রমাণ দিতে হবে—বিশেষ করে অর্থায়ন, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, এবং আইনি দায়বদ্ধতায়।

    সংগঠন ও ব্যাপক অংশগ্রহণের অভাব বিশ্লেষকরা বলছেন, NCP-র এখনো গ্রামীণ অঞ্চলে বা জাতীয়ভাবে শক্ত ভোটব্যাংক নেই।  রাজনীতিতে শুধুই অভিজ্ঞ তরুণ বা শহুরে অংশই যথেষ্ট নয় — রাজনৈতিক যন্ত্রণা, স্থানীয় নেতারা, দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন লাগে। এই দিকটি NCP-র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অভিজ্ঞতার অভাব ও বাস্তবায়নের ঘাটতি প্রতিশ্রুতি অনেক দেওয়া হয়েছে — নতুন সংবিধান, অংশগ্রহণমূলক দেশ, সংস্কার ইত্যাদি। কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি। “Action that appears to be missing so far” – এমন মন্তব্যও রয়েছে।  সংস্কার একটি কঠিন প্রক্রিয়া — শুধু কথা দিয়েই নয়, সময়, সংগঠন ও রাজনৈতিক সহায়ক পরিবেশ দরকার। ভোটব্যাংক বা পুরনো দলের ভ্রাতৃপ্রতিযোগিতা পুরনো দলগুলো যেমন Awami League বা Bangladesh Nationalist Party তাদের নিজস্ব শক্তিশালী ভোটব্যাংক ও দীর্ঘকালীন সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। NCP-র কাছে এই ধরনের রূপ নিচ্ছিলেই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকরা বলছেন, “Without alliances, its impact is likely to be marginal.”  দুর্নীতি‐অভিযোগ ও আস্থা কমে যাওয়ার ঝুঁকি যেভাবে শুরুতে “সংস্কারপন্থী” ইমেজ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বেড়ে গেল তা NCP-র ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। যেমন একটি সংবাদে বলা হয়েছে “in infighting, accusations of corruption … turn idealism into opportunism”।  এজন্য এ-দলে বিশেষভাবে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি দ্রুত স্থাপন করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক পরিবেশ ও ইন্সটিটিউশনাল বাধা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এখনই খুব স্থিতিশীল নয় — নির্বাচন, প্রতিষ্ঠান-সংস্কার, রাজনৈতিক দ্বিধা আছে। একটি নতুন দল হিসেবে NCP-র জন্য এই পরিবেশে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে।

    সমীক্ষা: NCP টিকে থাকবে কি না, বা আসল সংস্কার আনতে পারবে কি না?

    টিকে থাকার সম্ভাবনা: হ্যাঁ — যদি তারা সময়মতো সংগঠন গড়তে পারে, ভোটব্যাংক তৈরি করতে পারে, এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো সারাতে পারে তাহলে নতুন দল হিসেবে তারা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। আসল সংস্কার আনতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা: এখানে আশঙ্কা বেশি — কারণ সংস্কার মানে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ষাঁড়শক্তি, ঘুলোপ্রথা, সংস্থাগত সংস্কৃতি এসবকে চ্যালেঞ্জ করবে। তাই যদি NCP-র নেতারা সত্যিই আগ্রহী হন, তাহলে তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হবে: অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করা ও প্রকাশ করা। স্থানীয় সংগঠন ও দলীয় কাঠামো দ্রুত গঠন করা। দুর্নীতি, নিয়োগ-চাপ, অর্থায়ন-স্বচ্ছতা ইত্যাদিতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। রাজনৈতিক সহায়ক পরিবেশ ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া হাতে নেওয়া।

    শেষ কথা যা না বললে নয়, আসুন আমরা সবাই মিলে, হাতে হাত রেখে দেশের জন্য কাজ করি।আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি, 

    Emam Hossain

  • (১) যে গল্পটা আমাদের বুক ধক্‌ করে — সেটা সাহসের, ত্যাগের, আর এক অদম্য আত্মবিশ্বাসের গল্প। ২৩ জুন ১৯৪৯-এ জন্ম নেয়া ওই প্রতিভাবান রাজনৈতিক যাত্রা—যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার, বাংলা ভাষার মর্যাদা, আর স্বাধীনতার স্বপ্ন এক সূত্রে বাঁধা হলো—সেই সূত্র থেকেই আজকের অহংকার গড়ে উঠেছে। 

    (২) আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয় — এটি ‘জনতার কথা বলার’ একটি প্রত্যয়। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে, ভাষার আন্দোলনে, জাতির ক্ষত সারাতে, মুজিবর কণ্ঠস্বর যখন বলেছিল “আমরা স্বাধীন হবই,” — তখন যে সংগ্রাম ছুঁয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের প্রাণ; সেই সংগ্রামের স্মৃতিই আজও নৌকার প্রতীককে আলোকিত করে। 

    (৩) আজকের দিনে যখন দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের বিস্তার, ডিজিটাল সামর্থ্য ও অবকাঠামোকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন কথা হয় — তাতে অল্প-বেশি ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক। তবে যে ইতিহাস নৌকাকে শ্রদ্ধা করে—তাকে ভুলে যাওয়া যায় না; ইতিহাস এমনিতেই মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, স্মরণ করায় দায়িত্ব ও ভালোবাসা। 

    (৪) কিছু কণ্ঠস্বর বলে, রাজনীতি কঠিন; কিন্তু রাজনীতিই তো বদলের তুলেধরা মঞ্চ। যারা কঠোর পরিশ্রম, রাতদিন কাজ ও জনসেবায় বিশ্বাস করে — তাদের অঙ্গিকারই শেষ পর্যন্ত দেশকে সামনের সারিতে দাঁড় করায়। জনতার ভরসা, নেতৃত্বের ত্যাগ আর সুশাসনের প্রত্যাশা—এসব মিলেই এক শক্তিশালী জাতি গঠিত হয়।

    (৫) এক শ্লোগান — চোখে জ্বলন্ত আগুন, মুখে একসুর প্রত্যয়:
    “নৌকা তোমার, জনতার আশা — অগ্রগতি, গৌরব ও শোষণমুক্ত বাসা!”

    (৬) শেষ কথা — ইতিহাস হাসিমুখে স্মরণ করায়: স্বাধীনতার সূর্য একবারই অস্ত যায় না। যারা মানুষের কল্যাণকে কেন্দ্র করে কাজ করে, তাদের ওপরই ভর করে নতুন প্রজন্ম ভবিষ্যত গড়ে তোলে। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যখন প্রতিদিনের জীবনে বদলে আসে—সেই সময়েই আমরা সত্যিকার উন্নয়ন দেখি।

  • মাননীয় “প্রধান ওপদেষ্ঠা,,

    আজ আপনাকে লিখছি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, একজন আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে, আর সবচেয়ে বড় কথা — এই দেশের সন্তান হিসেবে। আপনি বহু বছর ধরে দেশের উন্নয়নের কথা বলেন, মানবতার কথা বলেন, কিন্তু আজ দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে আপনার নীরবতা, আপনার বিদেশমুখী আর্জি, আর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাহিরের শক্তিকে জড়ানোর প্রচেষ্টা আমাদের প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে — আপনার মানবতা কার স্বার্থে?

    দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, ত্যাগ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ আপনি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। উন্নয়নের কথা বলে যারা উন্নয়নের পথে বাধা দেয়, তাদের উদ্দেশ্য কি সত্যিই দেশপ্রেম? নাকি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে করতালি পাওয়ার লোভ?

    জনগণ ভুলে যায় না। এই মাটির গন্ধ যারা চেনে, তারা জানে — দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা যতই ছড়ানো হোক, এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে। আপনি হয়তো ভাবেন, বিদেশের চোখে চোখ রেখে চাপ সৃষ্টি করবেন, কিন্তু মনে রাখবেন — দেশের মাটি যতই ধুলায় মাখা হোক, এই মাটির সন্তানরা বিক্রি হয় না।

    আপনি চান বিদেশের প্রশংসা; আমরা চাই দেশের সম্মান।
    আপনি বেছে নিয়েছেন কূটচাল; আমরা বেছে নিয়েছি উন্নয়ন, আত্মত্যাগ, আর দেশপ্রেম।

    ইতিহাস একদিন বিচার করবে — কে দেশের পাশে ছিল, আর কে মুখোশ পরে বিদেশি মঞ্চে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল।

    বিনীত,
    একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ও গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক